আজ (২২ অক্টোবর) দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য “মানসম্মত হেলমেট ও নিরাপদ গতি, কমবে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি।” তবে দিবসটির মধ্যেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাটারিচালিত রিকশার অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার নতুন সড়ক নিরাপত্তা সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গত এক বছরে ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোয় রিকশায় ব্যাটারি সংযোজনের প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ রিকশাগুলোর বেশিরভাগই নিবন্ধনহীন ও প্রযুক্তিগতভাবে অনিরাপদ। গতি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল ব্রেকিং ব্যবস্থা, চালকদের অদক্ষতা ও এলোমেলো চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সরকারি হিসাবে দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিবন্ধনের কোনো সুযোগ নেই, ফলে এর সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, দেশে ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, গত দেড় বছরে এ সংখ্যা আরও কয়েক লাখ বেড়েছে।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, “ব্যাটারি রিকশা এখন নগর পরিবহনের জন্য বড় বিপদ। এটি রাজধানীর সড়ক ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল করেছে এবং ঢাকাকে কার্যত মফস্বল শহরে পরিণত করেছে।” তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে এ বাহনগুলো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, যা বন্ধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উৎপাদন পর্যায় থেকেই নিয়ন্ত্রণ।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাটারি রিকশা প্রায়ই ভুল লেনে চলে, হঠাৎ গতি পরিবর্তন করে বা উল্টো পথে আসে যা দ্রুতগতির অন্যান্য যানবাহনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে। চালকদের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ৮ জন এবং অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ৩৯ জন মারা গেছেন। ইজিবাইক দুর্ঘটনায় আরও ৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি।
এ অবস্থায়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, ব্যাটারি রিকশার পরিবর্তে নিরাপদ ও উন্নত মোটরাইজড রিকশা চালুর পরিকল্পনা চলছে। বুয়েটের সহায়তায় ‘সেফ রিকশা’ নকশা তৈরি করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে নিবন্ধনের আওতায় আনা হতে পারে।