ফরিদপুরের নগরকান্দায় ‘ইসলাম পরিপন্থি’ হওয়ার অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী বিচারগানের আসর। বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেন। এ সময় মঞ্চ ও প্যান্ডেল খুলে ফেলা হয়।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতিতে ‘বিচারগান’ একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় লোকসংগীতের ধারা, যেখানে গান ও সংলাপের মাধ্যমে নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয় নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। স্থানীয়ভাবে এটি বিনোদনের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবেও প্রচলিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে এই বিচারগানের আয়োজন করা হয়েছিল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি মেম্বার) সোলেমান ফকির আয়োজনটির উদ্যোক্তা ছিলেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে দুই দিন ধরে এলাকায় মাইকিং ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছিল। তবে অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আয়োজক সোলেমান ফকির বলেন, “গ্রামের মানুষদের অনুরোধে বিচারগানের আয়োজন করেছিলাম। এটা আমাদের এলাকার পুরোনো ঐতিহ্য, যেখানে সামাজিক বার্তা থাকে। কিন্তু কিছু হুজুর এসে এটাকে যাত্রাপালা বলে প্রচার করেন এবং ইসলাম পরিপন্থি বলে ইউএনও সাহেবের কাছে অভিযোগ করেন। তারপর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
অন্যদিকে, নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “বিচারগানের মতো যেকোনো বড় আয়োজনের জন্য আগেই অনুমতি নিতে হয়, যা জেলা প্রশাসক প্রদান করেন। কিন্তু এই আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ এসে জানায়, অনুষ্ঠানটি ইসলাম পরিপন্থি এবং এটি চললে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই জেলা প্রশাসকের পরামর্শে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
এ ঘটনায় সংস্কৃতি অনুরাগী মহলে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। তাঁদের মতে, বিচারগান বাংলার লোকসংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ধর্মবিরোধী নয় বরং সমাজে যুক্তিনির্ভর আলোচনার চর্চা বাড়ায়। অনুমতির অজুহাতে এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করা গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চার জন্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।