ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া এলাকায় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিন গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০ থেকে ১২ একর জমি ও নদীর অংশ দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তিমিরকাঠি ইউনিয়নের শতাধিক বাসিন্দার পৈতৃক সম্পত্তি নদী ভাঙনের পর জেগে ওঠে, এবং গত দুই দশকে এসব জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কীর্তনখোলা নদীর অংশ ব্লক ফেলে ভরাট করে জমি সম্প্রসারণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
গত ২৫–৩০ বছরে তিমিরকাঠি এলাকায় নদী ভাঙনের কারণে বহু জমি নদীতে বিলীন হয়। পরবর্তীতে এগুলো জেগে উঠলে সেগুলোকে সিকস্তি জমি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জমি মালিকদের দাবি, জেগে ওঠা জমি মূলত তাদের পূর্বের অবস্থানে ফিরে এসেছে, ফলে আইন অনুযায়ী তাদেরই মালিকানা পাওয়ার কথা। কিন্তু জমি জেগে ওঠার পরপরই অপসোনিনের কর্মীরা ব্লক ফেলে জায়গাটি নিজেদের জমির সঙ্গে একীভূত করে নেয়। একইভাবে ধাপে ধাপে নদীর জায়গাও দখল হয়েছে।
ভূমিহারা রমজান আকন ও মো. হাসানসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, অপসোনিন গ্রুপ গত ২০ বছরে প্রায় ১২ একর জমি ও নদীর অংশ দখলে নিয়েছে। তারা জানান, বাধা দিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় হামলা, হুমকি-ধমকির মুখে পড়তে হয়েছে। এ কারণে বছরের পর বছর জমি উদ্ধার অসম্ভব হয়ে পড়ে।
তবে গত ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতির পরিবর্তনে সিকস্তি জমির মালিক শতাধিক ব্যক্তি পুনরায় আন্দোলন শুরু করেছেন। তাদের তিন দফা দাবি—
কয়েক দিন আগে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমির মালিকদের সঙ্গে অপসোনিন গ্রুপের বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, তারা চার-পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অপসোনিন পক্ষের কাউকে পাননি। ফলে বৈঠক স্থগিত হয় এবং জমির মালিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে দপদপিয়া ফেরিঘাটের এক নৌযান চালক জানান, অপসোনিন গ্রুপ মাসিক ভাড়ায় নৌযান নেয় এবং কারখানার ভেতরে তৈরি ব্লক নদী সংলগ্ন স্থানে ফেলতে শ্রমিক নিয়োগ করে। ব্লক ফেলেই নদীর পানি সরে গিয়ে নতুন জমি তৈরি হয়। পরে সেটি সীমানাপ্রাচীর দিয়ে নিজস্ব জমির অংশ হিসেবে দখল করে কোম্পানি। এতে নদীপথ সংকুচিত হয়ে বড় জাহাজ চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
নদী গবেষক রফিকুল আলম জানান, কীর্তনখোলা নদীর দুই পাড়ে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে ৪ হাজার ১৯২ দখলদার রয়েছে। এর মধ্যে অপসোনিন গ্রুপ, খানসন্স ও প্রাণ গ্রুপ নদী দখলে সবচেয়ে এগিয়ে। তিনি বলেন, “তিমিরকাঠির জমি নদীতে বিলীন হয়ে আবার জেগে উঠেছে। এগুলোর সিকস্তি জমি একটি চক্র অপসোনিনকে বিক্রি করে দিয়েছে বলে ধারণা রয়েছে। তবে নদী ভরাট ও জমি দখল করাই বড় সমস্যা।”
অপসোনিন গ্রুপের এক কর্মকর্তা জানান, তারা কোনো জমি দখল করেননি। জেগে ওঠা জমি পূর্বের মালিকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং নদী ভাঙন রোধে ব্লক ফেলা হয়েছে। তাদের দাবি,“আমরা শুধু নিজেদের জমি রক্ষা করছি।”
বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, বিআইডব্লিউটিএ নদীর দুই পাড়ে মৌজা ম্যাপ অনুযায়ী পিলার বসিয়েছে। এখন জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া চালাবে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।