লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাত বছরের শিশুকন্যার মৃত্যুর পর এবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যাও। এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশজুড়ে নতুন করে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায়। স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল হোসেনের টিনের বাড়ির দরজায় বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে পরিবারের দাবি।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ঘরের তিনটি কক্ষে বেলাল হোসেন, তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম, তিন কন্যা ও দুই পুত্র ঘুমিয়ে ছিলেন। আগুন লাগার পর বেলাল হোসেন কোনোভাবে টিনের বেড়া উঁচু করে স্ত্রী, দুই পুত্র এবং দুই কন্যাকে বের করতে সক্ষম হন। তবে সাত বছরের কন্যা আয়েশা আক্তার আগুনের মধ্যে আটকা পড়ে যায়। ‘আব্বু বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে করতে ঘটনাস্থলেই ঝলসে মৃত্যু হয় শিশুটির।
এ ঘটনায় বেলাল হোসেন নিজে এবং তাঁর দুই কন্যা—বীথি আক্তার (১৪) ও সালমা আক্তার ওরফে স্মৃতি (১৭)—গুরুতর দগ্ধ হন। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
বুধবার রাত ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কলেজপড়ুয়া সালমা আক্তার। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ল্যাভেন্ডার ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ রবিউল করিম খান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সালমার শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
সালমা লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গত ৫ ডিসেম্বর তাঁর বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী ওমানে প্রবাসী।
অগ্নিকাণ্ডে আহত বেলাল হোসেন বুধবার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। ছোট মেয়ের জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে না পারার বেদনা নিয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, বড় মেয়েকে ঢাকায় দেখতে যাওয়ার আশা রাখছিলেন। তবে সেই আশা পূরণ হওয়ার আগেই মেয়েকে হারাতে হলো তাঁকে।
এ ঘটনায় বেলাল হোসেন সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার চার দিন পর মামলাটি হয়। যদিও পুলিশ প্রথমে নাশকতার কোনো ‘বিশ্বাসযোগ্য আলামত’ পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল, পরে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।
এই অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সারা দেশে প্রতিবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত দাবি করেছে।