এই বছর দীপাবলি ও কালীপূজো একই দিনে পড়েছে আগামীকাল সোমবার (২০ অক্টোবর)। দেবী পার্বতীর কোষ থেকে উৎপন্ন ভয়ঙ্করী দেবী কালীর আরাধনা ও আলোর উৎসব দীপাবলি এবার একাত্ম হয়ে উদযাপিত হচ্ছে। শাস্ত্রমতে, দেবী কালীই দশ মহাবিদ্যার প্রথম দেবী, যিনি শুম্ভ-নিশুম্ভ নিধনের জন্য অবতীর্ণ হন। তাই এই পূজায় দেবীকে ‘অশুভ শক্তি নিধনের প্রতীক’ হিসেবে আরাধনা করা হয়।
আর দীপাবলি মানে আলোর উৎসব এবং আলোর উৎসব মানেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর নতুন সূচনার প্রতীক। প্রতি বছর দীপাবলিতে লক্ষ্মী ও গণেশের পূজা করে ঘরে ধন-সম্পদ, শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা করেন মানুষ।
রংপুর অঞ্চলের কুমারপাড়াগুলোতে এখন উৎসবমুখর আমেজ। মাটির প্রদীপ তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত প্রায় তিন হাজার কুমার পরিবার। লালমনিরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জুড়ে সাজানো হয়েছে হাজারো ছোট-বড় ‘দিয়া’।
এই বছর রংপুর অঞ্চলে প্রায় ১২ কোটি প্রদীপের চাহিদা রয়েছে। কুমাররা জানিয়েছেন, প্রত্যেক পরিবার ২০ হাজার থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত প্রদীপ তৈরি করছে। সাধারণ মানের ১০০টি প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে ১৫০–১৬০ টাকায়, মাঝারি মানের ২২০–২৫০ টাকায়, আর উন্নত মানের প্রদীপ বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৩৫০ টাকায়। তবে কাদামাটি, কাঠ ও জ্বালানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে।
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার কুমার মোহন চন্দ্র পাল বলেন, “এবার প্রায় ৮০ হাজার প্রদীপ তৈরি করেছি। পাইকাররা এসে কিনে নিচ্ছে, আবার নিজেরাও বাজারে বিক্রি করছি। আমাদের গ্রামে ৬০টি পরিবার প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত।”
লালমনিরহাটের বিষ্ণু চন্দ্র পাল জানান, “প্রদীপ তৈরি করতে এখন ১০০টিতে ৩০–৭০ টাকা খরচ পড়ে। আগুনে পোড়ানো, শুকানো ও রং দেওয়া—সবই হাতে করতে হয়।”
কুড়িগ্রামের প্রবীণ কুমার শুভেন্দু নাথ পাল বলেন, “একসঙ্গে ৫ হাজার প্রদীপ পোড়াই। আগুন নিভে যাওয়ার ১২ ঘণ্টা পর সেগুলো বের করি। এ বছর আমাদের পরিবার ৭৫ হাজার প্রদীপ তৈরি করেছে।”
পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হিন্দু পরিবার দীপাবলি উদযাপন করে। প্রতিটি পরিবার ৩০০ থেকে ৮০০টি প্রদীপ কেনে, যা বাড়ি, মন্দির, শ্মশান ও দোকানে জ্বালানো হয়।
লালমনিরহাট পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, “দিয়া শুধু আলোর প্রতীক নয়, এটা প্রার্থনারও অংশ; প্রয়াত আত্মার শান্তি ও পৃথিবীতে সাম্যের প্রার্থনা। দীপাবলির রাতে যখন মাটির প্রদীপের আলো জ্বলবে, তখন কুমারদের জীবনও আলোকিত হবে।”