গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালপল্লীতে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং তিন সাঁওতাল হত্যার ঘটনার নয় বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর মহিমাগঞ্জ চিনিকল কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষে নিহত হন তিন সাঁওতাল—মঙ্গল মারডি, রমেশ টুডু ও শ্যামল হেমব্রম। আহত হন অন্তত ৩০ জন, পুড়িয়ে দেওয়া হয় শতাধিক ঘরবাড়ি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
এই ঘটনার নবম বার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচির আয়োজন করে আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, এএলআরডি এবং মানঝি পরিষদ।
সমাবেশের শুরুতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ফিলিমন বাস্কে, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি। প্রধান অতিথি ছিলেন এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা। বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, এ্যাড সিরাজুল ইসলাম বাবু, জাহাঙ্গীর কবির তনুসহ আরও অনেকে।
বক্তারা বলেন, “নয় বছরেও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। আদিবাসীদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ।” তারা অভিযোগ করেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে এই হামলা চালানো হয়েছিল।
সমাবেশে বক্তারা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন, যার মধ্যে রয়েছে—
- সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিল করে অন্যত্র স্থানান্তর
- চাষাবাদরত সাঁওতাল ও বাঙালিদের জন্য সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান
- সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে পৃথক ও স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন
- ২০১৬ সালের হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রদান
- আদিবাসীদের জমির মালিকানা স্বীকৃতি
- শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ বরাদ্দ
- আদিবাসী সংস্কৃতি ও ভাষার সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ
বক্তারা বলেন, “বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড স্থাপনের ঘোষণা আদিবাসী-বাঙালি জনগণকে হতাশ করেছে। কোনো পূর্ব সম্মতি ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ অমানবিক।” তারা সরকারের কাছে দাবি জানান, আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।