ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ীভাবে কারাগার ঘোষণা করেছে সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গুমের অভিযোগে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের পর সেখানে রাখা হতে পারে।
রোববার (১২ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ আল আসাদ। সোমবার (১৩ অক্টোবর) কারা–১ শাখা থেকে এ তথ্য গণমাধ্যমে জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮–এর ধারা ৫৪১(১) এবং প্রিজন অ্যাক্ট, ১৮৯৪–এর ধারা ৩(বি) অনুযায়ী, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস বিল্ডিং নং–৫৪’ সাময়িক কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে প্রজ্ঞাপনে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম–নির্যাতন সংঘটিত হওয়ার অভিযোগ এনে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করে। সে মামলায় এবং জুলাই আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা আরেক মামলায় ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ২৩ জন সেনা কর্মকর্তা, যাঁদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ পরিচালক জেনারেলও রয়েছেন।
এর পরদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জানায়, পরোয়ানাভুক্ত ১৫ কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমান কর্মকর্তা এবং একজন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন। সেনা সদর জানিয়েছে, এসব কর্মকর্তাকে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনা হেফাজতেই রাখা হতে পারে, তবে আদালতের নির্ধারিত তারিখে তাঁদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে সেনানিবাসের এমইএস ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার চাইলে আইন অনুযায়ী কোনো ভবনকে “সাবজেল” বা “উপকারাগার” ঘোষণা করে সেখানে আসামিদের রাখা যেতে পারে। এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকেও সংসদ ভবন এলাকায় সাবজেলে রাখা হয়েছিল।
এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “কারাগার যেখানেই হোক না কেন, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে হাজির করতে হবে। সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই। আইনের দৃষ্টিতে সবাই নাগরিক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের এই ক্ষমতা আছে যে তারা কোন স্থাপনাকে কারাগার ঘোষণা করবে। তবে আইনি প্রক্রিয়া ঠিকমতো অনুসরণ করতে হবে। আইন সবার জন্য সমান।”
কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সেনানিবাসের ওই অস্থায়ী কারাগারের দায়িত্বে থাকবেন একজন ডেপুটি জেলার, পাশাপাশি কয়েকজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।