আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধীদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে দায়ের করা তিনটি মামলায় সামরিক কর্মকর্তাদের নাম আসার পর সেই কর্মকর্তাদের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এর পরিবর্তে সেনা আইন অনুযায়ী করার দাবী জানিয়েছে সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যদের সংগঠন এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান সাইফ এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে সাইফুল্লাহ খান বলেন, গুম-খুনের মতো ঘটনার বিচার করার ক্ষেত্রে আইসিটি আইন প্রয়োগ করলে ভবিষ্যতে প্রয়ুক্তরা আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে 'পার পেতে' পারে। তিনি বলেন, “যদি আমার আপন ভাইও থাকে, আমি তার ফাঁসি চাইব এবং তা জনসমক্ষে চাইব কিন্তু বিচার এমনভাবে করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন ওঠে না।” কথাগুলো উদ্ধৃত করে তিনি বিচার-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও চূড়ান্ততা নিশ্চিত করার দাবি করেন।
অ্যাসোসিয়েশনটি আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো ও তুরস্কের উদাহরণ টেনে বলে, সেসব দেশে ডিকটেটরশিপের বিচার সেনা আইন সংশোধনের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। বাংলাদেশেও প্রয়োজনে সেনা আইন সংশোধন করে বা একটি অধ্যাদেশ দিয়ে আইসিটি আইনের ধারা পর্যালোচনা করে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে এটাই তাদের পরামর্শ।
সাইফুল্লাহ খান আইসিটি আইন ও সেনা আইনের মধ্যে সাংঘর্ষিক ধারা উল্লেখ করে বলেন, “সংবিধান দুটোই স্বীকৃত; কিন্তু যদি কোনো কিছু সাংঘর্ষিক হয়, তখন সংবিধান অনুযায়ী উপযুক্ত প্রাধান্য নির্ধারণ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, সেনা আইনে বিচার হলে দেশবাসীর সেনাবাহিনীর ওপর আস্থাই রয়ে যাবে এবং বিচার প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে না।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুরালে তিনটি মামলা দায়েরের পর ৩২ জন সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়; রাষ্ট্রপক্ষের দাবি অনুযায়ী কিছু কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনাগুলোর প্রেক্ষিতে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবন সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সরকারকে তাগিদ দেয় এই ঘটনায় ‘ফুল স্টপ’ দেওয়া যাবে না; যথাযথ ও চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে আইনগত সঙ্কট তৈরি হবে। তারা বলেন, সংসদ ছাড়া বিকল্প নিয়মে আইন প্রয়োগ সম্ভব হলেও বিচারযন্ত্র ও আইন পরিবর্তন কিভাবে স্থায়ী ও আপত্তিহীন করা যায়, সে ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।